অলোকিক শক্তি

অলোকিক শক্তি


"অলোকিক শক্তি"

রবিনের মা চলে গেছেন অনেক বছর হলো। মায়ের অনুপস্থিতি প্রতিটি মুহূর্তে তার জীবনকে বিষাক্ত করে তুলেছে। মাকে ঘিরে কত স্মৃতি, কত কথা, কত না বলা অনুভূতি আজও তার হৃদয়ের প্রতিটি কোণায় জীবন্ত হয়ে আছে।

মায়ের প্রিয় এই বাড়িটা একদম আগের মতোই রেখে গেল। দেয়ালের রঙ, পর্দার ডিজাইন, প্রতিটি আসবাব—সবকিছু ঠিক তেমনিই রয়েছে, যেমনটি তার মা ছেড়ে গেছিলেন। ছোটবেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় মা তাকে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরের মেঘে রঙ ধরা আকাশ দেখাতেন। সেই স্মৃতির এক গভীর টান  মনে চিরকাল গেঁথে আছে। মা চলে যাওয়ার পরেও সেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা আকাশ তার মনে তার মাকে ফিরে পাওয়ার মতো।

একদিন, হঠাৎ পুরনো সিন্দুকটা গুছাতে গিয়ে রবিনের  হাতে পড়ে মায়ের একদিনকার পুরনো একটি ডায়েরি। তার মা প্রতিদিনের ছোটখাটো অভিজ্ঞতা, খুশি-দুঃখ, ভালোবাসার মুহূর্তগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। সেই ডায়েরির পাতাগুলো উল্টাতে গিয়ে তার চোখ পড়ে এক বিশেষ পাতায়। সেখানে মায়ের লেখা, "আজ রবিনকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলাম। ওর হাসিটা এমন সুন্দর! মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মা আমি। ওর ছোট ছোট হাতে যখন আমার হাতটা ধরল, মনে হলো যেন আমি পৃথিবীর সব সুখ পেয়ে গেছি।"

পড়তে থাকে রবিন ডায়েরির পাতাগুলো। মনে হয়, যেন মা তার সামনে বসে কথা বলছেন, জীবনের নানা অভিজ্ঞতার গল্প করছেন। কিন্তু যত পড়তে থাকে, রবিনের চোখে এক ধরনের গভীর বিষণ্ণতা আর অভিমান জমতে থাকে। কেন মা তাকে এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন? কেন তাকে এতটা একা রেখে গেলেন এই শূন্য বাড়িতে?

রবিনের জীবনের গভীরতম কষ্ট ও শূন্যতার হাটে অগত্যা তার একেসাথে শুধু মাতের প্রত্যক্ষ ও প্রিয় রুপ। ভোরে যদিও তারই বহমান উজাসি আলো, গভীর রাতে দাঁড়িয়ে প্যারাড়, চাঁদের সন্ধা ঠিক অহং তুলেনা চাদেরই, মধ্যরাতে।


মায়ের সেই স্নেহময় স্মৃতি তাকে বারবার সাহস দেয়, যেন তার জীবনের সব কষ্ট ও শূন্যতাকে দূর করে আলোকিত হতে পারে। মায়ের ভালোবাসা ও শিক্ষাই তাকে আলোর পথে নিয়ে যাবে, যেখানে তিনি মায়ের মতো সাহসী হয়ে উঠবেন। রবিনের কাজ আর ছোট সংসার ছাড়া যেন জীবনে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

একদিন কাজ শেষে ক্লান্ত রবিন ফেরার পথে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে এক ছোট্ট মেয়ে কান্নাকাটি করছে। মেয়েটির কাছে গিয়ে জানতে চায়, "কেন কাদছে?

সে তার মূল্যবান জিনিসটি হারিয়ে ফেলেছে। সেটি হলো তার মা।।রবিন মেয়েটিকে আশ্বাস দেয় এবং তার মা কে ফিরে পেতে সাহায্য করে। এখন রবিনের মনে এক অন্যরকম শান্তি অনুভব হচ্ছে।

এরপর থেকে রবিন তার জীবনের নতুন লক্ষ্য খুঁজে পায়। প্রতিদিনের কাজের পর সে আশেপাশের মানুষদের সাহায্য করতে শুরু করে। ছোট ছোট কাজ-কখনো কারো সন্তানকে পড়ানো, কখনো বৃদ্ধ প্রতিবেশীর জন্য বাজার করে আনা-এসব কাজ করতে গিয়ে সে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করে। তার মনে হয়, মা হয়তো দূর থেকে তাকে দেখছেন আর তার এই কাজে খুশি হচ্ছেন নিশাত জানে, মা হয়তো এই পৃথিবীতে নেই, কিন্তু মা'র স্মৃতি, তার আদর্শ, তার ভালোবাসা রবিনকে প্রতিটি মুহূর্তে বেঁচে থাকার অর্থ শেখায়। জীবনের প্রতিটি ভালো কাজ, প্রতিটি মুহূর্তেই যেন রবিন মাকে ফিরে পায়। মা'র স্মৃতি, তার জীবন দর্শন—সবকিছু মিলিয়ে রবিনের জীবনে মায়ের উপস্থিতি চিরন্তন হয়ে থাকে, তার হৃদয়ের মায়ার আলো হয়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks

নবীনতর পূর্বতন