বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক কে?
বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ঘোষক জিয়া আর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে ঘোষক মুজিব।
আসলে ঘটনাটা কি,,চলুন এক নজর দেখে আসি?
আওয়ামীলীগের মতে: ২৫ মার্চ রাতে ২৬ শে মার্চের শুরুতে নিজ বাসায় গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। তথ্যমতে এর জন্য আগের দিন বুয়েট থেকে প্রকৌশলী এনে বাসায় ট্রান্সমিটার বসিয়েছিলেন। কিন্তু এর কোন সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাই নাই। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল (বিএনপি) জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করে থাকে।
মূলত 7 মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর পরিস্থিতি হয়ে উঠে আরও উত্তেজনাপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় এলেন সে সময়ের পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং ১৬ই মার্চ থেকে শুরু হলো মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। আলোচনার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি না হলে ২৫শে মার্চ মধ্য রাত থেকে ঢাকায় শুরু হলো সামরিক অভিযান। এর মধ্যেই ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে আটক হন শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে আটকের আগেই শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করে একটি তারবার্তা পাঠান। ২৬শে মার্চ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. এ. হান্নান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিব কর্তৃক প্রেরিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রথম ও পরবর্তীতে একাধিকবার পাঠ করেন। তারপর মেজর জিয়া সন্ধ্যা 7:45 মিনিটে এবং পরের দিন এবং 27শে মার্চ কালুরঘাট থেকে প্রথমে নিজ নামে পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ডাক দেন। মেজর জিয়ার কণ্ঠের সেই ভাষণ বার বার সারা দেশে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে তাই মানুষ শুনেছে জিয়ার ভাষণ ।
কিছু প্রমাণ সমূহ :
২৫শে মার্চ রাতের বাংলার পরিস্থিতি ও মুজিবকে আটক ঘটনা ২৭তারিখে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশের পত্রিকা খবরে প্রকাশিত হয় :
BBC খবরে বলেন: পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিব এক গুপ্ত বেতার থেকে জনগণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।
Voice of America বলা হয়: ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিব একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং বিশ্বের নিকট সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
দিল্লির দি স্টেটসম্যানের খবর ছিলো: "বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, একটি গোপন বেতার থেকে প্রচারিত ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।"
The Daily Telegrap, লন্ডন পত্রিকায় বলা হয়েছে: শেখ এ ট্রেইটর, সেইস প্রেসিডেন্ট'শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন ঘোষণা ও ইয়াহিয়া খান তার বেতার ভাষণে শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক বলার কথা উল্লেখ করা হয়।
Gardian খবরে বলা হয়: ২৬শে মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতির উদ্দেশ্যে রেডিওতে ভাষণ দেয়ার পরেই The Voice Of Bangladesh নামে একটি গোপন বেতারকেন্দ্র থেকে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর এই ঘোষণা অপর এক ব্যক্তি পাঠ করেন।"
The Buenos Aires Herald in Argentina : তাদের 27 তারিখের একটি শিরোনাম ছিলো, "Bengali Independence Declared by Mujib"
New York Times-এ শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার ছবি ছাপানো হয়। বলা হয় 'স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুজিব আটক'।
বার্তা সংস্থা API একটি খবরে বলা হয়: ইয়াহিয়া পুনরায় মার্শাল ল ও শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে।"
আয়ারল্যান্ডের The Irish Times শিরোনামে বলা হয় : পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার সাথে ছিলো শেখ মুজিবের ছবি।
Delhi Reuters খবরে : ১০ হাজার মানুষের নিহত হবার ও স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুজিবকে সম্ভবত আটক করা হয়েছে।
Bangkok খবরে বলা হয়: "শেখ মুজিব বাংলাদেশ নাম দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়"
***তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সামরিক কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী বীর উত্তম আবদুল করিম খন্দকার ২০১৪ সালে ভেতরে বাইরে গ্রন্থে লেখেন: শেখ মুজিব ৭ই মার্চ থেকে শুরু করে গ্রেপ্তারের আগে পর্যন্ত কোন ঘোষণা দেন নি, কোন লিখিত ডকুমেন্ট বা রেকর্ডকৃত বার্তাও রাখেন নি। এবংকোন দিকনির্দেশনাও বলে যান নি। ইয়াহিয়া খান অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে সাতই মার্চ যদি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তাহলে এই আন্দোলনকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেন, "তুমি এমন কিছু করো না, যা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়। আমি আলোচনা করার জন্য ঢাকায় আসছি।" ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন 7ই মার্চের পর। কিন্তু এর আগে মুজিব তার ভাষণটি দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাঙ্গালী বুঝতে পারছিল না এর পরে কি করতে হবে। জনগণকে যুদ্ধ করার জন্য যেভাবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন, তা করা হয়নি। ভাষণে চূড়ান্ত কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া গেল না। ভাষণটির পর মানুষজন ভাবতে শুরু করল--এরপর কী হবে? বঙ্গবন্ধু 7ই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকেন মুজিব। তা ছাড়া ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে ওই ধরনের ঘোষণা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হয়তো এখানে ইয়াহিয়ার উপস্থিতিতে একটি স্থায়ী সমাধানের সম্ভাবনা দেখেছিলেন। মঈদুল হাসান, উইং কমান্ডার SR মীর্জা এবং আমার মধ্যে আলোচনাভিত্তিক গ্রন্থ : মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর গ্রন্থে কথোপকথনে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় তাজউদ্দীন ও শেখ মুজিব সাক্ষাতের বিষয়ে সাংবাদিক মঈদুল হাসান বলেন : ২৫-২৬ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমান যে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী হবেন, তিনি যে বাড়িতেই থাকবেন--এই সিদ্ধান্তটা তিনি দলের নেতৃস্থানীয় কারও সঙ্গে আলাপ করেননি । তেমনি বলে যাননি যে তিনি না থাকলে কে বা কারা নেতৃত্ব দেবেন এবং কোন লক্ষ্যে কাজ করবেন। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কি কোনো আলাদা কমিটি করতে হবে? তাদের কৌশলটা কী হবে? এঁদের কি কোনো কর্মসূচি থাকবে? সেখানে দলের প্রবীণদের কী ভূমিকা হবে, তরুণদেরই বা কী ভূমিকা হবে-এসব কোনো প্রশ্নের উত্তরই কারও জানা ছিল না। তাজউদ্দীন আহমদ স্বীকার করেছিলেন, সেই খসড়া ঘোষণাটি তার নিজের লেখা ছিল এবং তিনি বঙ্গবন্ধুকে খসড়া ঘোষণাটি পাঠ করার প্রস্তাব করেছিলেন । লেখাটা ছিল সম্ভবত এই রকম : “পাকিস্তানি সেনারা আমাদের আক্রমণ করেছে অতর্কিতভাবে। তারা সর্বত্র দমননীতি শুরু করেছে। এই অবস্থায় আমাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং আমি শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম।" তাজউদ্দীন আরও বলেন, এই খসড়াটি পড়ে শেখ মুজিবুর রহমান কোনো কিছুই বললেন না। নিরুত্তর রইলেন। অনেকটা এড়িয়ে গেলেন। “মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে। কেননা কালকে কী হবে, যদি আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়? তাহলে তো সবাই জানতে পারবে তাদের কি করতে হবে। এই ঘোষণা কোনো গোপন জায়গায় সংরক্ষিত থাকলে পরে আমরা ঘোষণাটি প্রচার করতে পারব। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাও করা হবে।' বঙ্গবন্ধু তখন প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, 'এটা আমার বিরুদ্ধে একটা দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের বিচার করতে পারবে।' এ কথায় তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে সম্ভবত রাত নয়টার পরপরই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীকালে মঈদুল হাসান এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল মোমিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনিও ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। আবদুল মোমিন বলেন, তিনি যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকছিলেন, তখন দেখেন যে তাজউদ্দীন আহমদ খুব রাগান্বিত চেহারায় ফাইলপত্র বগলে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবদুল মোমিন তাজউদ্দীনের হাত ধরে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি রেগে চলে যাও কেন? তখন তাজউদ্দীন আহমদ তার কাছে আগের ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, 'বঙ্গবন্ধু একটু ঝুঁকিও নিতে রাজি নন। অথচ আমাদের ওপর একটা আঘাত বা আক্রমণ আসছে।
কিন্তু পরবর্তীতে কবি এই লাইনগুলোর কথা অস্বীকার করেছেন এবং জাতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।